ই-কমার্সের পর আলোচনায় ডিজিটাল সুদ কারবার। বেশ কিছুদিন ধরেই অনলাইনে চলছে রমরমা সুদের কারবার। এতে ঝুঁকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তবে এসব সুদ ব্যবসায় নিবন্ধন না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছে অনেকে। কেউ কেউ ইতোমধ্যে প্রতারিতও হয়েছে। অনেকে আবার চড়া সুদ গুনছেন মাসের পর মাস ধরে। ডিজিটাল সুদ কারবারিদের ধরতে আগে থেকেই পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি ছিলো।

এদিকে মাইক্রো ক্রেডিটের (ক্ষুদ্রঋণ) নামে সারা দেশে অনিবন্ধিত সুদের ব্যবসা পরিচালনাকারী (সমবায় সমিতি ও এনজিওর) প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আদালতের এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

ফলে নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সুদ কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে পুলিশ। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে ডিজিটাল মাইক্রোফাইন্যান্সের নামে অবৈধ সুদের কারবারে জড়িত পাঁচজন।

গতকাল তাদের গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলেন ইমানুয়েল অ্যাডওয়ার্ড গোমেজ, আরিফুজ্জামান, শাহিনুর আলম ওরফে রাজীব, শুভ গোমেজ ও মো. আকরাম। তাদের কাছ থেকে একটি এলিয়ন গাড়ি, ৯টি মোবাইল ফোন, ৯টি সিম কার্ড, চারটি ল্যাপটপ, চারটি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, সুদ কারবারের অ্যাপগুলোর মধ্যে রয়েছে টাকাওয়ালা (পার্সোনাল লোনস অনলাইন), র্যাপিডক্যাশ, আমার ক্যাশ, ক্যাশসহ আরও অনেক অ্যাপ। এসব অ্যাপে প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৫০ লাখ মানুষ ডাউনলোড করেছে। সবাই ব্যবহার না করলেও বিশাল একটা অংশ এসব অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে। হাফিজ আক্তার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউবে ক্ষুদ্র, জামানতবিহীন ঋণ ও চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে অনৈতিকভাবে সুদের ব্যবসা করতো তারা। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তারা গ্রাহকদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডাটা সংগ্রহে রাখতো।

তিনি আরও বলেন, এ ব্যবসার মূলে রয়েছে কিছু চীনা নাগরিক। এদের ব্যবহূত অ্যাপ মূলত চীনের সার্ভার থেকে পরিচালিত হতো। ফলে কত টাকা কিংবা কতজন এ ব্যবসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা আমরা এখনো জানতে পারিনি। এসব কাজ তারা মূলত দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে করে থাকে। তারা যদিও বলতো তিন থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো লোন নিতে পারবে কিন্তু তারা তিন হাজার থেকে বেশি লোন দিতো না। প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের ছোট অ্যামাউন্টের টাকা দিয়ে পয়েন্ট অর্জন করতে হতো।

প্রতি সপ্তাহে তাদের বিভিন্ন অ্যামাউন্টের টাকা দেয়া হতো এবং সাপ্তাহিকভাবেই তাদের সুদসহ টাকা পরিশোধ করতে হতো। তারা প্রথমেই নানা খরচ যেমন অ্যাপ্লিকেশন ফি, সার্ভিস চার্জ এসব দেখিয়ে টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা দিতো। কিন্তু গ্রাহককে পরিশোধ করতে হতো পুরো টাকাই। যেমন কোনো যদি গ্রাহক তিন হাজার টাকা নিতে চায় তাহলে সে পাবে ২১৫০ টাকা কিন্তু তাকে তিন হাজার টাকাই পরিশোধ করতে হতো।

কীভাবে গ্রাহক থেকে পরবর্তীতে টাকা উদ্ধার করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে থাকে। গ্রাহক জেনে না মোবাইলের বিভিন্ন সুবিধা যেমন লোকেশন, ক্যামেরা, ফাইলের অ্যাকসেস দিয়ে দেয় অ্যাপে। আর তার মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তারা। এতে টাকা পরিশোধ করতে তারা বাধ্য হয়। এরা অ্যাপে স্থায়ী কোনো ঠিকানাও দেয় না।

মূলহোতাদের গ্রেপ্তারে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আর চীনের নাগরিক যারা আমাদের দেশে আছে তাদের আমরা ধরার চেষ্টা করবো। আর এর সঙ্গে যদি আরও কেউ জড়িত থাকে তাদেরও আমরা গ্রেপ্তার করবো।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, আমরা চাই না আমাদের দেশে কেউ অবৈধভাবে সুদের ব্যবসা করবে এবং এর মাধ্যমে কেউ প্রতারিত হবে। এরা মূলত গ্রামের মহাজনদের মতো সুদের ব্যবসা করে আসছে। মহাজনরা যেভাবে টাকা প্রদানের আগেই সুদের টাকা কেটে রাখতো। এরাও একই রকম কাজ করছে।